জাতিসংঘে ইউক্রেনের প্রস্তাবের পক্ষে বাংলাদেশ ভোট দেওয়ায় রাশিয়ার অর্থায়নে চলা প্রকল্প বাস্তবায়নে তেমন সমস্যা হবে না বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুকেন্দ্রসহ দেশটির অর্থায়নে চলমান প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশা করি যুদ্ধ শেষ হবে। আমাদের কর্মপরিকল্পনা চলছে, এগুলো ঠিকমতো চলবে। একটু একটু ধাক্কা খাবে। আমরা পরিস্থিতি সামলে নেব।

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে শনিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বঙ্গবন্ধু স্মরণে স্থাপিত অস্থায়ী বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনি এ কথা বলেন। এ সময় একাত্তরে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়ার বিষয়েও প্রশ্নের জবাব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি আশা করব, পাকিস্তানের যত নতুন প্রজন্ম, যারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না, তারা এই ব্যাপারে অগ্রসর হয়ে আসবে। তাদের যদি নিজেদের বোধোদয় না হয়, তাহলে কিন্তু আরও অপকর্ম করার সম্ভাবনা আছে। সে কারণে এই দিনে আমার আশাবাদ, পাকিস্তানিরা স্বেচ্ছায় আমাদের কাছে জাতীয়ভাবে দুঃখপ্রকাশ করবে।

দিবস উপলক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়। এর অংশ হিসাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও এ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) শাব্বির আহমেদ চৌধুরী, সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস, ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টর আসাদ আলম সিয়ামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ইউক্রেনের প্রস্তাবে ভোট দেওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগেও বলেছি, বঙ্গবন্ধু চাপের মুখে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। বঙ্গবন্ধুর কন্যাও চাপের মুখে কোনো সিদ্ধান্ত নেন না। সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণটি হচ্ছে, আমরা শান্তিপূর্ণ দেশ। পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের স্থান এক নম্বরে। বিশ্বে টেকসই শান্তির জন্য আমরা একটি প্রস্তাব দিয়েছি, যা বিশ্বের ১৯৩ দেশ গ্রহণ করেছে। শান্তির সংস্কৃতি নামে ওই প্রস্তাবের মাধ্যমে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এর উদ্দেশ্য দেশে দেশে মারামারি, কাটাকাটি, সন্ত্রাস বন্ধ করা। পৃথিবীতে শান্তির ক্ষেত্রে আমরা লিডার। তিনি বলেন, ইউক্রেনে লোকজন নির্যাতিত হচ্ছেন, কষ্ট করছেন। তাদের জন্য যথাসময়ে খাবার এবং ওষুধ পৌঁছে দেওয়া, প্রয়োজন হলে তাদের বের হওয়ার জন্য করিডর তৈরির মতো একাধিক বিষয় এবং বিশেষ করে যুদ্ধ বন্ধের জন্য ভোট দিয়েছি।

ইউক্রেনের বর্তমান মানবিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে আনেন ড. আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, আমরা তিন কোটি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়েছিলাম। এক কোটি মানুষ জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছিল। এখন ইউক্রেনের সাধারণ মানুষও জীবন বাঁচাতে ঘরবাড়ি ছাড়ছেন। তাই আমরা মানবিক কারণে জাতিসংঘে ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দিয়েছি।

একাত্তরে নিরীহ বাঙালিদের ওপর হত্যাযজ্ঞের পরও ক্ষমা না চাওয়াকে খুবই দুঃখজনক হিসাবে অভিহিত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি প্রায়ই বলি, পাকিস্তানিদের লজ্জা পাওয়া উচিত। এই জন্য যে এতবড় নির্যাতন হয়েছে, গণহত্যা হয়েছে, তৎকালীন সময়ে এই যে পাকিস্তানি মিলিটারি জান্তা এবং পাকিস্তান সরকারের রিপোর্টও বলেছে, অতিরিক্ত নির্যাতন করা হয়েছে। তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। তারা হিউম্যানিটারিয়ান যত ধরনের আইনকানুন, দেশি-বিদেশি, সব লঙ্ঘন করেছে। এই যে অপরাধ করেছে, সেজন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত। কারণ এই অপরাধ অগ্রহণযোগ্য। মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচার পাকিস্তান সরকারের করা উচিত।

 

 

কলমকথা/ বিথী